Friday, July 21, 2023

পরশ-পাথর

                                                    ------ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর---সোনার তরী



খ্যাপা খুঁজে খুঁজে ফিরে পরশপাথর।

   মাথায় বৃহৎ জটা                 ধূলায় কাদায় কটা,

        মলিন ছায়ার মতো ক্ষীণ কলেবর।

   ওষ্ঠে অধরেতে চাপি            অন্তরের দ্বার ঝাঁপি

        রাত্রিদিন তীব্র জ্বালা জ্বেলে রাখে চোখে।

   দুটো নেত্র সদা যেন             নিশার খদ্যোত-হেন

        উড়ে উড়ে খোঁজে কারে নিজের আলোকে।

   নাহি যার চালচুলা            গায়ে মাখে ছাইধুলা

        কটিতে জড়ানো শুধু ধূসর কৌপীন,

   ডেকে কথা কয় তারে        কেহ নাই এ সংসারে

        পথের ভিখারি হতে আরো দীনহীন,

   তার এত অভিমান,            সোনারুপা তুচ্ছজ্ঞান,

        রাজসম্পদের লাগি নহে সে কাতর,

   দশা দেখে হাসি পায়          আর কিছু নাহি চায়

        একেবারে পেতে চায় পরশপাথর!

        সম্মুখে গরজে সিন্ধু অগাধ অপার।

   তরঙ্গে তরঙ্গ উঠি                 হেসে হল কুটিকুটি

        সৃষ্টিছাড়া পাগলের দেখিয়া ব্যাপার।

আকাশ রয়েছে চাহি,           নয়নে নিমেষ নাহি,

        হু হু করে সমীরণ ছুটেছে অবাধ।

সূর্য ওঠে প্রাতঃকালে           পূর্ব গগনের ভালে,

        সন্ধ্যাবেলা ধীরে ধীরে উঠে আসে চাঁদ।

জলরাশি অবিরল                 করিতেছে কলকল,

        অতল রহস্য যেন চাহে বলিবারে।

কাম্য ধন আছে কোথা        জানে যেন সব কথা,

        সে-ভাষা যে বোঝে সেই খুঁজে নিতে পারে।

কিছুতে ভ্রূক্ষেপ নাহি,        মহা গাথা গান গাহি

        সমুদ্র আপনি শুনে আপনার স্বর।

কেহ যায়, কেহ আসে,        কেহ কাঁদে, কেহ হাসে,

        খ্যাপা তীরে খুঁজে ফিরে পরশ-পাথর।

        একদিন, বহুপূর্বে, আছে ইতিহাস--

নিকষে সোনার রেখা            সবে যেন দিল দেখা--

        আকাশে প্রথম সৃষ্টি পাইল প্রকাশ।

মিলি যত সুরাসুর                  কৌতূহলে ভরপুর

        এসেছিল পা টিপিয়া এই সিন্ধুতীরে।

অতলের পানে চাহি                নয়নে নিমেষ নাহি

        নীরবে দাঁড়ায়ে ছিল স্থির নতশিরে।

বহুকাল স্তব্ধ থাকি               শুনেছিল মুদে আঁখি

        এই মহাসমুদ্রের গীতি চিরন্তন;

তার পরে কৌতূহলে           ঝাঁপায়ে অগাধ জলে

        করেছিল এ অনন্ত রহস্য মন্থন।

বহুকাল দুঃখ সেবি                নিরখিল, লক্ষ্মীদেবী

        উদিলা জগৎ-মাঝে অতুল সুন্দর।

সেই সমুদ্রের তীরে                  শীর্ণ দেহে জীর্ণ চীরে

        খ্যাপা খুঁজে খুঁজে ফিরে পরশপাথর।

        এতদিনে বুঝি তার ঘুচে গেছে আশ।

খুঁজে খুঁজে ফিরে তবু          বিশ্রাম না জানে কভু,

        আশা গেছে, যায় নাই খোঁজার অভ্যাস।

বিরহী বিহঙ্গ ডাকে               সারা নিশি তরুশাখে,

        যারে ডাকে তার দেখা পায় না অভাগা।

তবু ডাকে সারাদিন              আশাহীন শ্রান্তিহীন,

        একমাত্র কাজ তার ডেকে ডেকে জাগা।

আর-সব কাজ ভুলি            আকাশে তরঙ্গ তুলি

        সমুদ্র না জানি কারে চাহে অবিরত।

যত করে হায় হায়           কোনোকালে নাহি পায়,

        তবু শূন্যে তোলে বাহু, ওই তার ব্রত।

কারে চাহি ব্যোমতলে           গ্রহতারা লয়ে চলে,

        অনন্ত সাধনা করে বিশ্বচরাচর।

সেইমতো সিন্ধুতটে                ধূলিমাথা দীর্ঘজটে

        খ্যাপা খুঁজে খুঁজে ফিরে পরশপাথর।

        একদা শুধাল তারে গ্রামবাসী ছেলে,

"সন্ন্যাসীঠাকুর, এ কী,         কাঁকালে ও কী ও দেখি,

        সোনার শিকল তুমি কোথা হতে পেলে।'

সন্ন্যাসী চমকি ওঠে               শিকল সোনার বটে,

        লোহা সে হয়েছে সোনা জানে না কখন।

একি কাণ্ড চমৎকার,            তুলে দেখে বার বার,

        আঁখি কচালিয়া দেখে এ নহে স্বপন।

কপালে হানিয়া কর               বসে পড়ে ভূমি-'পর,

        নিজেরে করিতে চাহে নির্দয় লাঞ্ছনা;

পাগলের মতো চায়--           কোথা গেল, হায় হায়,

        ধরা দিয়ে পলাইল সফল বাঞ্ছনা।

কেবল অভ্যাসমত                  নুড়ি কুড়াইত কত,

        ঠন্‌ ক'রে ঠেকাইত শিকলের 'পর,

চেয়ে দেখিত না, নুড়ি          দূরে ফেলে দিত ছুঁড়ি,

        কখন ফেলেছে ছুঁড়ে পরশ-পাথর।

        তখন যেতেছে অস্তে মলিন তপন।

আকাশ সোনার বর্ণ,              সমুদ্র  গলিত স্বর্ণ,

        পশ্চিম দিগ্বধূ দেখে সোনার স্বপন।

সন্ন্যাসী আবার ধীরে               পূর্বপথে যায় ফিরে

        খুঁজিতে নূতন ক'রে হারানো রতন।

সে শকতি নাহি আর                 নুয়ে পড়ে দেহভার

        অন্তর লুটায় ছিন্ন তরুর মতন।

পুরাতন দীর্ঘ পথ                 পড়ে আছে মৃতবৎ

        হেথা হতে কত দূর নাহি তার শেষ।

দিক হতে দিগন্তরে               মরুবালি ধূ ধূ করে,

        আসন্ন রজনী-ছায়ে ম্লান সর্বদেশ।

অর্ধেক জীবন খুঁজি              কোন্‌ ক্ষণে চক্ষু বুজি

        স্পর্শ লভেছিল যার এক পল ভর,

বাকি অর্ধ ভগ্ন প্রাণ              আবার করিছে দান

        ফিরিয়া খুঁজিতে সেই পরশ-পাথর।

মেঘের পরে মেঘ জমেছে

                                                     ------- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর---গীতাঞ্জলি



মেঘের 'পরে মেঘ জমেছে,

             আঁধার করে আসে,

আমায় কেন বসিয়ে রাখ

             একা দ্বারের পাশে।

                           কাজের দিনে নানা কাজে

                           থাকি নানা লোকের মাঝে,

                           আজ আমি যে বসে আছি

         তোমারি আশ্বাসে।

আমায় কেন বসিয়ে রাখ

            একা দ্বারের পাশে।

 

তুমি যদি না দেখা দাও,

            কর আমায় হেলা,

কেমন করে কাটে আমার

            এমন বাদল-বেলা।

    দূরের পানে মেলে আঁখি

    কেবল আমি চেয়ে থাকি,

                    পরান আমার কেঁদে বেড়ায়

        দুরন্ত বাতাসে।

আমায় কেন বসিয়ে রাখ

         একা দ্বারের পাশে।

ওরে নবীন, ওরে আমার কাঁচা

                                             ------- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর---বলাকা



ওরে  নবীন, ওরে আমার কাঁচা,

     ওরে সবুজ, ওরে অবুঝ,

     আধমরাদের ঘা মেরে তুই বাঁচা।

রক্ত আলোর মদে মাতাল ভোরে

আজকে যে যা বলে বলুক তোরে,

সকল তর্ক হেলায় তুচ্ছ ক'রে

     পুচ্ছটি তোর উচ্চে তুলে নাচা।

     আয় দুরন্ত, আয় রে আমার কাঁচা।

 

খাঁচাখানা দুলছে মৃদু হাওয়ায়;

     আর তো কিছুই নড়ে না রে

     ওদের ঘরে, ওদের ঘরের দাওয়ায়।

ওই যে প্রবীণ, ওই যে পরম পাকা,

চক্ষুকর্ণ দুইটি ডানায় ঢাকা,

ঝিমায় যেন চিত্রপটে আঁকা

     অন্ধকারে বন্ধ করা খাঁচায়।

     আয় জীবন্ত, আয় রে আমার কাঁচা।

 

বাহিরপানে তাকায় না যে কেউ,

     দেখে না যে বাণ ডেকেছে

     জোয়ার-জলে উঠছে প্রবল ঢেউ।

চলতে ওরা চায় না মাটির ছেলে

মাটির 'পরে চরণ ফেলে ফেলে,

আছে অচল আসনখানা মেলে

     যে যার আপন উচ্চ বাঁশের মাচায়,

     আয় অশান্ত, আয় রে আমার কাঁচা।

 

তোরে হেথায় করবে সবাই মানা।

     হঠাৎ আলো দেখবে যখন

     ভাববে এ কী বিষম কাণ্ডখানা।

সংঘাতে তোর উঠবে ওরা রেগে,

শয়ন ছেড়ে আসবে ছুটে বেগে,

সেই সুযোগে ঘুমের থেকে জেগে

     লাগবে লড়াই মিথ্যা এবং সাঁচায়।

     আয় প্রচণ্ড, আয় রে আমার কাঁচা।

 

শিকল-দেবীর ওই যে পূজাবেদী

     চিরকাল কি রইবে খাড়া।

     পাগলামি তুই আয় রে দুয়ার ভেদি।

ঝড়ের মাতন, বিজয়-কেতন নেড়ে

অট্টহাস্যে আকাশখানা ফেড়ে,

ভোলানাথের ঝোলাঝুলি ঝেড়ে

     ভুলগুলো সব আন্‌ রে বাছা-বাছা।

     আয় প্রমত্ত, আয় রে আমার কাঁচা।

 

আন্‌ রে টেনে বাঁধা-পথের শেষে।

     বিবাগী কর্‌ অবাধপানে,

     পথ কেটে যাই অজানাদের দেশে।

আপদ আছে, জানি অঘাত আছে,

তাই জেনে তো বক্ষে পরান নাচে,

ঘুচিয়ে দে ভাই পুঁথি-পোড়োর কাছে

     পথে চলার বিধিবিধান যাচা।

     আয় প্রমুক্ত, আয় রে আমার কাঁচা।

 

চিরযুবা তুই যে চিরজীবী,

     জীর্ণ জরা ঝরিয়ে দিয়ে

     প্রাণ অফুরান ছড়িয়ে দেদার দিবি।

সবুজ নেশায় ভোর করেছি ধরা,

ঝড়ের মেঘে তোরি তড়িৎ ভরা,

বসন্তেরে পরাস আকুল-করা

     আপন গলার বকুল-মাল্যগাছা,

     আয় রে অমর, আয় রে আমার কাঁচা।

যে-কথা বলিতে চাই

                                         ------ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর---বলাকা



যে-কথা বলিতে চাই,

         বলা হয় নাই,

             সে কেবল এই--

চিরদিবসের বিশ্ব আঁখিসম্মুখেই

             দেখিনু সহস্রবার

             দুয়ারে আমার।

     অপরিচিতের এই চির পরিচয়

এতই সহজে নিত্য ভরিয়াছে গভীর হৃদয়

     সে-কথা বলিতে পারি এমন সরল বাণী

          আমি নাহি জানি।

 

শূন্য প্রান্তরের গান বাজে ওই একা ছায়াবটে;

     নদীর এপারে ঢালু তটে

          চাষি করিতেছে চাষ;

     উড়ে চলিয়াছে হাঁস

ওপারের জনশূন্য তৃণশূন্য বালুতীরতলে।

          চলে কি না চলে

        ক্লান্তস্রোত শীর্ণ নদী, নিমেষ-নিহত

          আধো-জাগা নয়নের মতো।

          পথখানি বাঁকা

     বহুশত বরষের পদচিহ্ন-আঁকা

চলেছে মাঠের ধারে, ফসল-খেতের যেন মিতা,

     নদীসাথে কুটিরের বহে কুটুম্বিতা।

 

ফাল্গুনের এ-আলোয় এই গ্রাম, ওই শূন্য মাঠ,

              ওই খেয়াঘাট,

ওই নীল নদীরেখা, ওই দূর বালুকার কোলে

      নিভৃত জলের ধারে চখাচখি কাকলি-কল্লোলে

          যেখানে বসায় মেলা-- এই সব ছবি

              কতদিন দেখিয়াছে কবি।

শুধু এই চেয়ে দেখা, এই পথ বেয়ে চলে যাওয়া,

     এই আলো, এই হাওয়া,

এইমতো অস্ফুটধ্বনির গুঞ্জরণ,

     ভেসে-যাওয়া মেঘ হতে

     অকস্মাৎ নদীস্রোতে

          ছায়ার নিঃশব্দ সঞ্চরণ,

যে আনন্দ-বেদনায় এ জীবন বারেবারে করেছে উদাস

          হৃদয় খুঁজিছে আজি তাহারি প্রকাশ।

বিপদে মোরে রক্ষা করো

                                     ----- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর---গীতাঞ্জলি



বিপদে মোরে রক্ষা করো

এ নহে মোর প্রার্থনা,

বিপদে আমি না যেন করি ভয়।

দুঃখতাপে ব্যথিত চিতে

নাই বা দিলে সান্ত্বনা,

দুঃখে যেন করিতে পারি জয়।

সহায় মোর না যদি জুটে

নিজের বল না যেন টুটে,

সংসারেতে ঘটিলে ক্ষতি

লভিলে শুধু বঞ্চনা

নিজের মনে না যেন মানি ক্ষয়।


আমারে তুমি করিবে ত্রাণ

এ নহে মোর প্রার্থনা,

তরিতে পারি শকতি যেন রয়।

আমার ভার লাঘব করি

নাই বা দিলে সান্ত্বনা,

বহিতে পারি এমনি যেন হয়।

নম্রশিরে সুখের দিনে

তোমারি মুখ লইব চিনে,

দুখের রাতে নিখিল ধরা

যেদিন করে বঞ্চনা

তোমারে যেন না করি সংশয়।

অন্তর মম বিকশিত করো

                      ------ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর---গীতাঞ্জলি

অন্তর মম বিকশিত করো
     অন্তরতর হে।
নির্মল করোউজ্জ্বল করো,
    সুন্দর কর হে।
           জাগ্রত করোউদ্যত করো,
                নির্ভয় করো হে।
      মঙ্গল করোনরলস নিঃসংশয় করো হে।
           অন্তর মম বিকশিত করো,
                অন্তরতর হে।

যুক্ত করো হে সবার সঙ্গে,
  মুক্ত করো হে বন্ধ,
সঞ্চার করো সকল মর্মে
  শান্ত তোমার ছন্দ।
      চরণপদ্মে মম চিত নিঃস্পন্দিত করো হে,
          নন্দিত করোনন্দিত করো,
              নন্দিত করো হে।
          অন্তর মম বিকশিত করো
               অন্তরতর হে।

জ্যোৎস্নায় ভাসছে ঢাকা

                    ------- শামসুর রাহমান 

জ্যোৎস্নায় ভাসছে ঢাকা, অবসন্ন হাটুরের মতো বসে আছি

হাঁটু মুড়ে নগর ভেলায়।

এ এক প্রকৃত খেলা, এই ভেসে-যাওয়া তীরবর্তী শোভা দেখে,

জ্যোৎস্নার মাধ্যমে গড়ে তোলা মধুর সম্পর্ক কোনো

মহিলার সাথে।

বাতিল প্রেমিক যদি ফের খুঁজে পায় বেলাবেলি সম্প্রীতির ডেরা,

তাহ’লে সে নীলিমাকে জানিয়ে অভিবাদন, প্রায়

ফুরফুরে প্রজাপতি হয়ে উড়ে উড়ে অপরাহ্নে

ঘাসের অম্লান সবুজকে চুমু খেয়ে, হাত রেখে

খরগোশ অথবা কাঠবিড়ালীর পিঠে, হাত রেখে

খরগোশ অথবা কাঠবিড়ালীর পিঠে, দেয়ালের শ্যাওলায়

মগ্ন হবে গৃহপ্রবেশের সূরে এক লহমায়। কয়েক শতাব্দী তার

আঙুলে উঠবে নেচে, দেশলাই জ্বালালে আঁধারে

প্রাচীন দেয়ালচিত্র অকস্মাৎ হবে উন্মোচিত, বুঝিবা আহত হবে

কাতর হৃদয় তার অতীতের অসামাজিকতা হেতু আর

রাখবে সে চোখ টিকটিকি কিংবা বাতির ওপর।


জ্যোৎস্নায় ভাসছে ঢাকা, ঢাকাও মরাল হতে জানে

পূর্ণিমায়, দেখে নিই। যেন দরদালান সমেত যাচ্ছে উড়ে

দুলিয়ে বিপুল ডানা মগজের জ্যোৎস্নায় আমার।

ওলোট-পালোট কত স্মৃতি গোলাপের মতো ঝরে

এখন আমাকে ঘিরে, ঘ্রাণে নেশাতুর হয়ে পড়ি।

শৈশব কাঠের ঘোড়া চেপে আসে, যৌবনের খর দিনগুলি,

রাত্রিগুলি খুব মেশামেশি করে রক্ত কণিকায়,



চামর দোলায় কোন, অব্যক্ত তরুণী, তবু কিছু স্বেদচিহ্ন

থেকে যায় আমার এ শরীর-পেরুনো অন্য এক অবয়বে।

জ্যোৎস্নায় ভাসছে ঢাকা, আমিও ভাসছি ক্রমাগত।

জ্যোৎস্নায় ভাসছে, ঢাকা ওরা মৃত, ওরা পূর্বগামী পরিজন,

বুঝি ওরা বারংবার মরীচিকার চিৎকার শুনে

ছুটে গেছে, কোথায় যে মরুদ্যান প্রস্রবণ নিয়ে

আমন্ত্রণে উন্মুখর বেলা শেষে, করেনি খেয়াল। ওরা মৃত,

ভ্রান্তির গহ্বরে ওরা হারিয়ে ফেলেছে কণ্ঠস্বর।

দেখি প্লেগ-কবলিত শহরের মতো

ক্রুর অমাবস্যার এলাকা-

ছিন্নভিন্ন জামা, জীর্ণ জুতো পড়ে আছে ইতস্ততঃ

কাঁটাগুল্ম, পাথরের মধ্যে, ফুলের কেয়ারিগুলি ভরে ওঠে

পচা নাড়িভুড়ি আর হাড়গোড়ে। দেখি কতিপয়

ন্যাংটো লোক পথে

করছে বপন মৃত্যু,-আমি কি অসুস্থ হয়ে পড়ছি তাহ’লে?


আমার অসুখ বলে ঢাকা মন খারাপ করেছে।

ওর চোখে-মুখে বিষণ্নতা জেগে থাকে সারাক্ষণ,

যত বলি ফুল্ল স্বরে, ভেবোনা লক্ষ্মীটি, আমি খুব

তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবো, দেখে নিও,

তত সে খারাপ করে মন, চোখে জমে অশ্রুকণা,

আমার শিয়রে বসে থাকে ঠিক নার্সের ধরনে।

জ্যোৎস্নায় ভাসছো তুমি ঢাকা বেসামাল পূর্ণিমায়।

যাবো না স্বাস্থ্যের লোভে কোনো শৈলাবাসে,

তুমি আছি থেকো তুমি আমার অসুখ সেরে যাবে।

জ্বরদগ্ধ চোখে দেখি জ্যোৎস্না-ধোয়া স্নেহজাত পথ্য

তার হাতে নাচ আর রোজ নিয়ে আসে কিছু ফুল

রোগীর টেবিলে সুখ ফোটানোর অমল উদ্দেশ্যে।

আমার অস্তিত্ব থেকে অসুখের ছায়া সরে যাচ্ছে, দেখে যাও।