___জীবনানন্দ দাশ
‘আমাকে খোঁজো না তুমি বহুদিন- কতদিন আমিও তোমাকে
খুঁজি নাকো;- এক নক্ষত্রের নিচে তবু- একই আলো পৃথিবীর পারে
আমারা দু’জনে আছি; পৃথিবীর পুরোনো পথের রেখা হয়ে যায় ক্ষয়,
প্রেম ধীরে মুছে যায়, নক্ষত্রেরও একদিন মরে যেতে হয়,
হয় নাকি?’- ব’লে সে তাকাল তার সঙ্গিনীর দিকে;
আজ এই মাঠে সূর্য সহধর্মী অঘ্রাণ কার্তিকে
প্রাণ তার ভ’রে গেছে।
দু’জনে আজকে তারা চিরস্থায়ী পৃথিবী ও আকাশের পাশে
আবার প্রথম এলো- মনে হয়- যেন কিছু চেয়ে- কিছু একান্ত বিশ্বাসে।
লালচে হলদে পাতা অনুষঙ্গে জাম বট অশ্বত্থের শাখার ভিতরে
অন্ধকারে ন’ড়ে-চ’ড়ে ঘাসের উপর ঝ’রে পড়ে;
তারপর সান্ত্বনায় থাকে চিরকাল।
যেখানে আকাশে খুব নীরবতা, শান্তি খুব আছে,
হৃদয়ে প্রেমের গল্প শেষ হ’লে ক্রমে-ক্রমে যেখানে মানুষ
আশ্বাস খুঁজেছে এসে সময়ের দায়ভাগী নক্ষত্রের কাছেঃ
সেই ব্যাপ্ত প্রান্তরে দু’জন; চারিদিকে ঝাউ আম নিম নাগেশ্বরে
হেমন্ত আসিয়া গেছে;- চিলের সোনালি ডানা হয়েছে খয়েরি;
ঘুঘুর পালক যেন ঝ’রে গেছে- শালিকের নেই আর দেরি,
হলুদ কঠিন ঠ্যাং উঁচু ক’রে ঘুমাবে সে শিশিরের জলেঃ
ঝরিছে মরিছে সব এইখানে- বিদায় নিতেছে ব্যাপ্ত নিয়মের ফলে।
নারী তার সঙ্গীকেঃ ‘পৃথিবীর পুরোনো পথের রেখা হ’য়ে যায় ক্ষয়,
জানি আমি;- তারপর আমাদের দুঃস্থ হৃদয়
কী নিয়ে থাকিবে বল;- একদিন হৃদয়ে আঘাত ঢের দিয়েছে চেতনা,
তারপর ঝ’রে গেছে; আজ তবু মনে হয় যদি ঝরিত না
হৃদয়ে প্রেমের শীর্ষ আমাদের- প্রেমের অপূর্ব শিশু আরক্ত বাসনা
ফুরোত না যদি, আহা, আমাদের হৃদয়ের থেকে-’
এই ব’লে ম্রিয়মাণ আঁচলের সর্বস্বতা দিয়ে মুখ ঢেকে
উদ্বেল কাশের বনে দাঁড়ায়ে রহিল হাঁটুভর।
হলুদ রঙের শাড়ি, চোরকাঁটা বিঁধে আছে, এলোমেলো অঘ্রাণের খড়
চারিদিকে শূন্য থেকে ভেসে এসে ছুঁয়ে ছেনে যেতেছে শরীর;
চুলের উপর তার কুয়াশা রেখেছে হাত, ঝরিছে শিশির;-
প্রেমিকের মনে হ’লোঃ ‘এই নারী- অপরূপ- খুঁজে পাবে নক্ষত্রের তীরে;
যেখানে রব না আমি, রবে না মাধুরী এই, র’বে না হতাশা,
কুয়াশা র’বে না আর- জানিত বাসনা নিজে- বাসনার মতো ভালোবাসা
খুঁজে নেবে অমৃতের হরিণীর ভিড় থেকে ইপ্সিতেরে তার।’
‘আমাকে খোঁজো না তুমি বহুদিন- কতদিন আমিও তোমাকে
খুঁজি নাকো;- এক নক্ষত্রের নিচে তবু- একই আলো পৃথিবীর পারে
আমারা দু’জনে আছি; পৃথিবীর পুরোনো পথের রেখা হয়ে যায় ক্ষয়,
প্রেম ধীরে মুছে যায়, নক্ষত্রেরও একদিন মরে যেতে হয়,
হয় নাকি?’- ব’লে সে তাকাল তার সঙ্গিনীর দিকে;
আজ এই মাঠে সূর্য সহধর্মী অঘ্রাণ কার্তিকে
প্রাণ তার ভ’রে গেছে।
দু’জনে আজকে তারা চিরস্থায়ী পৃথিবী ও আকাশের পাশে
আবার প্রথম এলো- মনে হয়- যেন কিছু চেয়ে- কিছু একান্ত বিশ্বাসে।
লালচে হলদে পাতা অনুষঙ্গে জাম বট অশ্বত্থের শাখার ভিতরে
অন্ধকারে ন’ড়ে-চ’ড়ে ঘাসের উপর ঝ’রে পড়ে;
তারপর সান্ত্বনায় থাকে চিরকাল।
যেখানে আকাশে খুব নীরবতা, শান্তি খুব আছে,
হৃদয়ে প্রেমের গল্প শেষ হ’লে ক্রমে-ক্রমে যেখানে মানুষ
আশ্বাস খুঁজেছে এসে সময়ের দায়ভাগী নক্ষত্রের কাছেঃ
সেই ব্যাপ্ত প্রান্তরে দু’জন; চারিদিকে ঝাউ আম নিম নাগেশ্বরে
হেমন্ত আসিয়া গেছে;- চিলের সোনালি ডানা হয়েছে খয়েরি;
ঘুঘুর পালক যেন ঝ’রে গেছে- শালিকের নেই আর দেরি,
হলুদ কঠিন ঠ্যাং উঁচু ক’রে ঘুমাবে সে শিশিরের জলেঃ
ঝরিছে মরিছে সব এইখানে- বিদায় নিতেছে ব্যাপ্ত নিয়মের ফলে।
নারী তার সঙ্গীকেঃ ‘পৃথিবীর পুরোনো পথের রেখা হ’য়ে যায় ক্ষয়,
জানি আমি;- তারপর আমাদের দুঃস্থ হৃদয়
কী নিয়ে থাকিবে বল;- একদিন হৃদয়ে আঘাত ঢের দিয়েছে চেতনা,
তারপর ঝ’রে গেছে; আজ তবু মনে হয় যদি ঝরিত না
হৃদয়ে প্রেমের শীর্ষ আমাদের- প্রেমের অপূর্ব শিশু আরক্ত বাসনা
ফুরোত না যদি, আহা, আমাদের হৃদয়ের থেকে-’
এই ব’লে ম্রিয়মাণ আঁচলের সর্বস্বতা দিয়ে মুখ ঢেকে
উদ্বেল কাশের বনে দাঁড়ায়ে রহিল হাঁটুভর।
হলুদ রঙের শাড়ি, চোরকাঁটা বিঁধে আছে, এলোমেলো অঘ্রাণের খড়
চারিদিকে শূন্য থেকে ভেসে এসে ছুঁয়ে ছেনে যেতেছে শরীর;
চুলের উপর তার কুয়াশা রেখেছে হাত, ঝরিছে শিশির;-
প্রেমিকের মনে হ’লোঃ ‘এই নারী- অপরূপ- খুঁজে পাবে নক্ষত্রের তীরে;
যেখানে রব না আমি, রবে না মাধুরী এই, র’বে না হতাশা,
কুয়াশা র’বে না আর- জানিত বাসনা নিজে- বাসনার মতো ভালোবাসা
খুঁজে নেবে অমৃতের হরিণীর ভিড় থেকে ইপ্সিতেরে তার।’